ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাংলাদেশি খাবারের তালিকা

পুদিনা পাতার উপকারিতা ও ১০ টি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ?সম্মানিত পাঠকগণ আসসালামু-আলাইকুম। এ অধ্যায়ে আমরা জানবো বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে। পূর্ণাঙ্গ খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন।



পেজ সূচিপত্র:ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাংলাদেশি খাবারের তালিকা।

সকালের নাস্তা বিকল্পসমূহ

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সকালের নাস্তা এমন হওয়া উচিত যা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি দেয়, আবার দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে। নিচে স্বাস্থ্যকর কিছু সকালের নাস্তার বিকল্প আলোচনা করা হলো:

1.ওটস (Oats)
  • উপকরণ সমূহ: এক্ষেত্রে উপকরণ সমূহ হলো জবার ওটস দুধ অথবা পানি সামান্য দারুচিনি বাদাম এবং এক টুকরা আপেল অথবা পেয়ারা ইত্যাদি প্রভৃতি বিশেষ।
  • উপকারিতা: উল্লেখিত খাবার গুলো হল অধিক ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যা আমাদের হজম প্রক্রিয়া ধীরে হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দূরত্ব ভাবে বৃদ্ধি করে না।
2. লাল আটার রুটি এবং ডিম
  • উপকরণ সমূহ: এক্ষেত্রে এক থেকে দুইটা লাল আটার রুটি, সেদ্ধ বা পোচ করা ডিম এবং শাক সবজির ক্ষেত্রে টমেটো বা শসা ইত্যাদি।
  • উপকারিতা: উক্ত খাবারগুলি কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এক্ষেত্রে প্রোটিনও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার।
3. ছোলা এবং সবজি
  • উপকরণ সমূহ: আপনি সিদ্ধ ছোলা, শশা, গাজর, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, লেবুর রস, ইত্যাদি খান।
  • উপকারিতা: এ খাবারগুলো ভাইবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা ইনসুলিন এবং সেনসিটিভিটি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
4. সুজি খিচুড়ি (কম তেল)
  • উপকরণসমূহ: সুজি এবং খিচুড়ির ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি সুজি এবং সবজি সামান্য সরিষার তেল সাথে হালকা মসলা খাবেন।
  • উপকারিতা: এক্ষেত্রে হালকা খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সবজির পুষ্টি অনেকাংশে পাওয়া যায়।
5. ফল এবং বাদামের মিশ্রণ
  • উপকরণসমূহ: উল্লেখযোগ্য পেয়ারা/আপেল/কমলা এবং চার থেকে পাঁচটি বাদাম বা আখরোট নিয়ে নিন খাবার তালিকায়।
  • উপকারিতা: তো খাবারগুলা হল প্রাকৃতিক শর্করা এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার।
পরামর্শ:
  • অবশ্যই আপনি চিনি বা মধু পরিহার বা ত্যাগ করুন
  • এক্ষেত্রে পরিমাণে কম খান কিন্তু নিয়মিত বা প্রতিদিন খান
  • অবশ্যই চেষ্টা করবেন চা খেলে দুধ চা না খাওয়ার জন্য এক্ষেত্রে আপনি লাল চাঁ বা গ্রিন টি পান করুন।

সুগন্ধি ভাতের পরিবর্তে লো-জিআই চাল বা লাল চাল

বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুগন্ধি ভাতের পরিবর্তে লো জি-আই চাল বা লাল চাল খুবই বিকল্প একটি মাধ্যম। কারণ জিআই চাল বা লাল চাল গুলোর intex বা গ্লাইসেমিক তুলনামূলকভাবে কম হয় যার ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
কেন লো জি আই চাল বা লাল চাল ভালো:
  1. লো জি-আই চালের ক্ষেত্রে ব্রাউন রাইস পাবোয়েলভ রাইস ইত্যাদি ধীরে বা খুব কম সময়ে হজম হয় যার ফলে আমাদের ইনসুলিন স্পাইক অনেকাংশে কম হয়।
  2. লাল চাল: এক্ষেত্রে লাল চাল মূলত ফাইবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ চাল যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে অধিক সহায়ক।
  3. অধিক ফাইবার: ফাইবার আমাদের কে ধীর বা আস্তে করে যার ফলে খাবারের পর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় বা বাড়ে।
পরামর্শ:
  • সাধারণত ভাত খাওয়ার ফলে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ যেমন প্রতিবেলায় অন্তত এক থেকে দুই কাপ অথবা এক কাপের কম ইত্যাদি।
  • আপনি ভাতের সাথে প্রোটিন যেমন ডাল, মাছ, ডিম এবং সবজি খাবেন যা গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
  • রোজ একই রকম চাল খাওয়ার বদলে আপনি মাঝে মাঝে চাল পরিবর্তন করতে পারেন।
প্রয়োজনে আপনি যদি চান তবে সে ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযোগী একটি খাবার পরিকল্পনা করে দেওয়া যেতে পারে।

সবজি নির্ভর তরকারি (তেলে ভাজা নয়)

সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবজি নির্ভর তরকারি গুলা এমনভাবে রান্না করা উচিত যাতে কম ক্যালরি এবং কম কার্বোহাইড্রেট ও উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হয়। নিচে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি সহজ ও স্বাস্থ্যকর সবজি তরকারির রেসিপি দেওয়া হল যা তেলে ভাজা ছাড়াই রান্না করা বা প্রস্তুত করা যায়:

ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি মিক্সড সবজি তরকারি (তেলে ভাজা ছাড়া )
  • ফুলকপি- এক কাপ বা ছোট টুকরা করে কাটা ফুলকপির পরিমাণ একটি
  • মিষ্টি কুমড়া: এক্ষেত্রে এক অথবা দুই কাপ
  • করোলা: একটি পাতলা স্লাইস সমৃদ্ধ
  • লাউ: পরিমাণ এক অথবা দুই কাপ
  • গাজর: এক্ষেত্রে এক থেকে দুই কাপ পর্যন্ত
  • বরবটি: এক থেকে দুই কাপ
  • টমেটো: কাটা একটি
  • পেঁয়াজ: পাতলা ভাবে কাটা একটি
  • রসুন: কুচানো দুই থেকে তিন কোয়া পর্যন্ত
  • কাঁচামরিচ: যে যার স্বাদ মতো
  • হলুদ গুঁড়ো: এক অথবা চার চা চামচ
  • জিরা গুঁড়ো: এক অথবা দুই চা চামচ পরিমাণ মতো
  • ধনেপাতা: এক্ষেত্রে ধনেপাতার পরিমাণ সামান্য
  • লবণ: আপনার সাদ মত নিয়ে নিবেন
  • পানি: যে যার পরিমাণ মতো
প্রস্তুত প্রণালী:
  1. প্রস্তুত এর জন্য আপনি একটি ননস্টিক প্যানে অল্প পরিমাণ পানি গরম করে তাতে পেঁয়াজ এবং রসুন দিয়ে হালকা ভাবে সিদ্ধ করে তেল ছাড়া সোতে করার মত যেমন দেখায়।
  2. এরপর আপনি একে একে সব সবজি দিয়ে দিন যা শক্ত সেটা আগে দিন এবং ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে মিশিয়ে নিন।
  3. পরিমাণ মতো হলুদ জিরা গুঁড়ো লবণ এবং কাঁচামরিচ দিয়ে দিন ।
  4. আপনি প্রয়োজনে সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিন এবং মাঝারি আঁচে সবজিগুলো ভালোভাবে সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
  5. যখন দেখবেন সবজি নরম হয়ে গেছে তখন উপরে সামান্য পরিমাণে ধনেপাতা দিয়ে দিন এবং নামিয়ে নিন।
টিপস:
  • সাধারণত রান্নার সময় আপনি সামান্য পরিমাণে লেবুর রস দিতে পারেন এক্ষেত্রে খাবারের স্বাদ হয়।
  • কিনি বা বেশি মিষ্টি জাতীয় সবজি যেমন আলু এবং মটর সব সময় এড়িয়ে চলায় উত্তম।
এই তরকারি গুলো আপনি রুটি বা ভাতের সঙ্গে নিয়ে খেতে পারেন তবে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই জরুরী খাদ্য।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (ডিম, মাছ, মুরগি)

সাধারণত আমরা জানি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো রক্তের শর্করার মাত্রা বা পরিমাণ স্থির রাখতে সহায়ক এবং পেটে অনেকক্ষণ পর্যন্ত খিদা লাগে না। ডিম মাছ এবং মুরগি দিয়ে তৈরি স্বাস্থ্যকর ও সহজ কয়েকটি রেসিপি নিচে দেওয়া হলো:

1. ডিম এবং সবজি ভাজি (তেল ছাড়া)
উপকরণ সমূহ:
  • এক্ষেত্রে ডিম দুইটি
  • পেঁয়াজ টমেটো লাউ পালং শাক বা আপনার যেকোনো পছন্দের স্বাদ কুচানো ইত্যাদি
  • লবণ এবং মরিচ যে যার স্বাদমতো
প্রস্তুত প্রণালী:
  1. সবজিগুলো হালকা গরম পানিতে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিবেন।
  2. এরপর ডিম ফাটিয়ে সবজির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
  3. পর্যায়ক্রমে একটি ননস্টিক প্যানে তেল ছাড়া অল্প গরম করে মিশ্রণটি ভালোভাবে নামিয়ে নিন ঢেলে নিন।
  4. ঢেকে দিন এবং এক পাশ হয়ে গেলে উল্টো পাশ সেকে নিন।
2. সেদ্ধ মাছের ভুনা (তেল ছাড়া)
উপকরণ সমূহ:
  • যেকোনো ধরনের মাছ এক টুকরো 
  • পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, টমেটো
  • লবণ, হলুদ, জিরা গুড়া ইত্যাদি।
প্রস্তুত প্রণালী:
  1. আপনার নেওয়া মাছটা হালকা লবণ এবং হলুদ দিয়ে ভালোভাবে সেদ্ধ করুন।
  2. অন্য একটি পাত্রে পেঁয়াজ রসুন এবং প্রয়োজনীয় মসলাগুলো অল্প পানিতে ফুটিয়ে নিন।
  3. এরপর পর্যায়ক্রমে মাছ দিয়ে দিন এবং অল্প আঁচে নাড়াচাড়া করুন।
  4. সর্বশেষে সামান্য পরিমাণে ধনেপাতা ছিটিয়ে দিন।

3. চিকেন (ওভেন বা প্যান ব্যবহার)
উপকরণসমূহ:
  • এক্ষেত্রে অবশ্যই মুরগির বুকের মাংস চিকেন ব্রেস্ট এক পিস।
  • আদা রসুন বাটা লেবুর রস গোল মরিচ এবং লবণ ইত্যাদি।
প্রস্তুত প্রণালী:
  1. প্রথমত আপনার সব মসলা দিয়ে মাংসটা মেরিমেন্ট করে নিন।
  2. মেরিনেট করা মাংস অন্ততপক্ষে এক ঘন্টা ঢেকে রাখুন ভালোভাবে।
  3. এরপর ননস্টিক প্যানে ঢাকনা দিয়ে মিডিয়াম আছে সিদ্ধ করে গ্রিলের মত করে সেকে নিয়ে নিন।
  4. এরপর আপনি ওভেনে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত বেক করে নিন।
ওপরে উল্লেখিত খাবার গুলো সাধারণত কম কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন হওয়ার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

ডাল এবং বাদাম জাতীয় খাবার সমৃদ্ধ

বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডাল এবং বাদাম জাতীয় খাবারগুলি খুবই উপকারী এবং সহায়ক। ডাল এবং বাদাম জাতীয় খাবার গুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইফার প্রোটিন এবং হেলদি ফ্যাট আছে যা রক্তের শর্করার মাত্রা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ রাখে। নিচে ডাল এবং বাদাম জাতীয় খাবারের তালিকা দেওয়া হল যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী বা প্রয়োজনীয়:

ডাল জাতীয় খাবার:
  1. মসুর ডাল: মসুর ডালে আমরা জানি সাধারণত গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হয় এবং ফাইফার ও প্রোটিন অনেকাংশে বেশি।
  2. ছোলা ডাল: ছোলা ডাল সাধারণত গ্লাইসেমিক কম এবং উচ্চফাইবার ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার।
  3. মুগ ডাল: মুগ ডাল সহজ পাত্র এবং রক্তে চিনির পরিমাণ ধীরে বা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি করে।
  4. তোর ডাল (অড়হর ডাল): উক্ত ডাল প্রোটিনের খুবই উপকারী উৎস এবং রক্তের শর্করার মাত্রা বা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।



বাদাম জাতীয় খাবার:
  1. বাদাম (Almonds): বাদাম সাধারণত কম কার্বো এবং বেশি হেলদি ও ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার যা ইনসুলিন এবং সেনসিটিভিটি অনেকাংশে বাড়ায়‌।
  2. আখরোট (Walnuts): আখরোট মূলত ওমেগা তিন ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যা হৃদয় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  3. পেস্তা (Pistachios): পেস্তা মূলত স্ন্যাক্ত হিসেবে ভালো খাবার এবং গ্লাইসেমিক রেসপন্স অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
  4. কাজু বাদাম (cashews): কাজুবাদাম সাধারণত পরিমান মত খেলে উপকার পাওয়া যায় তবে অতিরিক্ত খাওয়া বর্জন করা উচিত যেহেতু এতে কিছুটা কার্ব বেশি পাওয়া যায়।
  5. চিয়া সিডস: চিয়া সিডস মূলত ফাইবার এবং ওমেগা তিন সমৃদ্ধ খাবার যার মাধ্যমে হজম সহায়তা এবং রক্তে গ্লুকোজ শোষণ ধীরে ধীরে হয়।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
  • সব সময় মনে রাখবেন বা চেষ্টা করবেন বাদাম ভাজা বা নোনতা না খাওয়া।
  • প্রতিদিনের খাবারে অন্তত এক মুঠো বাদাম খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী
  • সব সময় চেষ্টা করবেন ডাল রান্না করার সময় তেল কম এবং মসলার ব্যবহার কম করার জন্য।

ফলমূল কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বিশিষ্ট ইত্যাদি

সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কম (GI) গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বিশিষ্ট ফলমূল নির্বাচন করা অধিক প্রয়োজনীয়, কারণ কমগ্রাইসিন এর সমৃদ্ধ খাবারগুলো ধীরে ধীরে রক্তে শর্করা বাড়ায় এবং তা নিয়ন্ত্রণে অনেকাংশে সাহায্য করে। নিচে কিছু স্বাস্থ্যকর কম গ্লাইসেমিক (GI) বিশিষ্ট ফলের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হলো:
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) বিশিষ্ট ফলমূল সমূহ:
1. আপেল (Apple)
  • GI-সাধারণত ৩৬-৪০
  • অনেকাংশে ফাইবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
2. কমলা/মুসাম্বি (Orange/Sweet Lime)
  • GI-সাধারণত ৩৫-৪০
  • উল্লিখিত ফলগুলা সাধারণত ভিটামিন সি এবং ফাইবারে ভরপুর সমৃদ্ধ।
3. নাশপাতি (Pear)
  • GI-মূলত ৩৮
  • নাশপাতি মূলত প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি কিন্তু রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে।
4. জাম (Black plum বা Jamun)
  • GI-মূলত খুবই কম ২০-২৫
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জ্যাম খুবই সহায়ক একটি ফল।
5. বেড়ি জাতীয় ফল (Strawberries Bluebarries)
  • GI- সাধারণত ২৫-৪০
  • বেরি জাতীয় ফল সাধারণত এন্টিঅক্সিডেন্টের অনেকাংশে ভরপুর এবং কাবে অনেকাংশে বেশি পুষ্টি।
6. অ্যাভোকাডো (Avocado)
  • GI মূলত খুবই কম যা ১৫
  • এতে কোনরকম শর্করার পরিমাণ নেই ওমেগা ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার।
7. পেয়ারা (Guava)
  • GI- সাধারণত ৩৫-৪০
  • পেয়ারা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার।
ফল খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু টিপস:
  • সব সময় চেষ্টা করবেন ফল পুরোটা খাওয়ার জন্য জুস করে নয় কারণ জুসে খাইবার থাকে না এবং রক্তে দ্রুত গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয়।
  • চেষ্টা করবেন একবারে বেশি পরিমাণ না খেয়ে দিনে দিনে এক থেকে দুই বার বা অল্প পরিমাণে ফল খাওয়ার জন্য
  • অবশ্যই মনে রাখবেন খাবার শেষে ফল খাওয়া ভালো খালি পেটে অবশ্যই নয়।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার লো ফ্যাট

সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দুধ এবং দুটো জাত খাবার খাওয়ার আগে বিশেষ কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরী। সাধারণত লো ফ্যাট low-fat বা ফ্যাট দুগ্ধ জাত খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত কারণ এতে সেচুরেটেড ফ্যাট অনেকাংশে কম থাকে এবং হার্টের জন্য অনেক ভালো তাছাড়া রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত লো ফ্যাট দুগ্ধ জাতীয় খাবার:
  1. লো ফ্যাট  দুধ : এক্ষেত্রে সাধারণত ১% বা স্কিম্ড দুধ বিকল্প হিসেবে ভালো।
  2. লো ফ্যাট দই : অবশ্যই চিনি যুক্ত না থাকলে ভালো এবং উপযোগী যেমন প্লেইন গ্রিক ইয়োগার্ট।
  3. লো ফ্যাট ছানা অথবা পনির : এক্ষেত্রে অবশ্যই কন্ট্রোল্ড পরিমাণে।
  4. স্কিমড মিল্ক পাউডার: অবশ্যই রান্নাই ব্যবহার করা যায়।
  5. কেফির : কে ফির হল এক ধরনের দুগ্ধচার খাবার যা চিনি ছাড়া হলে খুবই ভালো এবং উপযোগী।
কি থেকে দূরে থাকতে হবে বা সাবধান থাকতে হবে-
  • অধিক মিষ্টি জাতীয় দুধ এবং দই
  • অবশ্যই মিষ্টি দই বা ফ্লেভারড ইয়োগার্ট
  • ঘন মাখন বা গাওয়া ঘি থেকে দূরে থাকতে হবে
  • মনে রাখতে হবে অবশ্যই আইসক্রিম এবং মিষ্টি জাতীয় দুগ্ধ যার খাবার খাওয়া থেকে
পরামর্শ:
  • খাবার খাবার সময় অবশ্যই খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্র ণ রাখা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
  • অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট কনটেন্ট এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দেখে খাবার নির্বাচন করা সহায়ক বা ভালো।

সন্ধ্যার হালকা নাচতায় (চিরা, মুড়ি, এবং বাদাম)

বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সন্ধ্যার সময় হালকা নাস্তার বিকল্প হিসেবে চিড়া মুড়ি এবং বাদাম খুবই স্বাস্থ্যকর বিকল্প খাবার হিসেবে পরিচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিড়া মুড়ি এবং বাদামের একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো এবং কিছু পরামর্শ আলোচনা করা হলো:

সন্ধ্যার নাস্তা উপযোগী:
উপাদান সমূহ-
  • চিরা (সামান্য ভেজানো এবং শুকনো) : এক্ষেত্রে অবশ্যই ১/২ কাপ
  • মুড়ি :১/২ কাপ পরিমাণ
  • ভাজা বাদাম (চিনা বাদাম বা কাজু লবণ ছাড়া) :১ টেবিল চা চামচ পরিমাণ
  • সবজি (কুচানো টমেটো শশা পেঁয়াজ ধনেপাতা) : অবশ্যই পরিমাণমতো
  • লেবুর রস : এক চা চামচ পরিমাণ
  • কালো লবণ এবং চাট মসলা (অপশনাল) : যে যার মত স্বাদ অনুযায়ী
প্রস্তুত প্রণালী:
  1. চিরা এবং মুড়ি : এতে কম পরিমাণে ফ্যাট এবং হালকা শর্করা আছে যাতে হজম সহজেই হয়।
  2. বাদাম: বাদাম অনেকাংশে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং প্রোটিন সরবরাহ করে থাকে।
  3. সবজি: আমরা জানি সবজি ফাইবার এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ।
  4. লেবুর রস: সাধারণত ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে খুবই সহায়ক উপাদান।
উল্লেখিত খাবার গুলো রক্তে চিনির পরিমাণ হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দেয় না আবার পেটো অনেকক্ষণ ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

মিষ্টি এবং মিষ্টি জাত খাবারের বিকল্প ডায়াবেটিক মিষ্টান্ন

আমরা জানি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মিষ্টি খাওয়া খুবই সীমিত। কিন্তু স্বাস্থ্যকর এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য বিকল্প মিষ্টান্ন উপভোগ বা খাওয়া যায়। নিচে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জনপ্রিয় এবং উপকারী ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি মিষ্টির ধারণা আলোচনা করা হলো:

1.চিয়া পুডিং (Chia Pudding)
  • উপকরণ সমূহ: চিয়া বীজ, দুধ, লো ফ্যাট অথবা বাদাম মধু ইস্টিভিয়া বা ইরিথ্রিটল প্রাকৃতিক চিনি বিকল্প ভ্যানিলা ইত্যাদি প্রভৃতি বিশেষ।
  • স্বাস্থ্য উপকারিতা: জিয়া পুডিং মূলত অনেক ভাইবার এবং ওমেগা 3 সমৃদ্ধ খাবার।
2. ডার্ক চকলেট বাদাম দিয়ে (Dark Chocolate Convered Almonds)
  • অবশ্যই মনে রাখবেন সত্তর ৭০% পার্সেন্ট বা তার বেশি কোকো যুক্ত ডার্ক চকলেট ব্যবহার করার।
  • অবশ্যই অল্প পরিমাণে খাওয়া অধিক নিরাপদ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে অনেকাংশে ভরপুর থাকে।
3. নারকেল লাড্ডু (Low Carb Coconut Ladoo)
  • উপকরণসমূহ: নারকেল লাড্ডু তৈরির জন্য অবশ্যই শুকনো নারকেল বাদাম দুধ ইষ্টিভিয়া ইত্যাদি প্রয়োজন।
  • সব সময় চেষ্টা করুন চিনি ছাড়া ঝরঝরে ও সুস্বাদু লাড্ডু তৈরি করার।
4. ডায়াবেটিক সেমাই (Diabetic Shemai)
  • ডায়াবেটিক সেমাই তৈরি করার জন্য অবশ্যই সুইট নারীর সাথে দুধ এবং বাদাম যোগ করতে হবে।
  • অবশ্যই মনে রাখবেন গমের সেমাই বা সুগার ফ্রী সেমাই ব্যবহার করার জন্য।
5. ডায়াবেটিক সন্দেশ
  • ডায়াবেটিক সন্দেশ তৈরি করার জন্য অবশ্যই চিনি ছাড়া শুধু ছানা দিয়ে বানাতে হবে।
  • সন্দেশের ৭ বাড়ানোর জন্য অবশ্যই এলাচবোড়া ও ইস্টিভিয়া মেশাতে হবে।
আপনি যদি নির্দিষ্ট কোন খাবারের জন্য রেসিপি চান তবে সেক্ষেত্রে তৈরি করে দেওয়া যাবে।



পর্যাপ্ত পানি এবং ভেষজ চা (গ্রিন টি, দারুচিনি চা)

আমরা জানি বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ভেষজ চাঁদ গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে আর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে বিস্তারিতভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পানি পান এবং ভেষজ চায়ের উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

1. পর্যাপ্ত পানি পান করা:
কেন গুরুত্বপূর্ণ:
  • ডায়াবেটিস রোগীদের পর্যাপ্ত পানি পান শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে সহায়তা করে।
  • এবং অনেকাংশে ডিহাইড্রেশনও প্রতিরোধ করে থাকে।
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কিডনির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে।
পরামর্শ:
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উত্তম।
  • অবশ্যই চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • চিনি ছাড়া ঠান্ডা বা লেবু মেশানো পানি পান করুন।
2. গ্রিন টি (Green Tea)
উপকারিতা:
  • গ্রিন টি অনেকাংশে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর সমৃদ্ধ।
  • গ্রিন টি গ্রহণে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা অনেকাংশে বাড়তে সহায়তা করে।
  • এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে খুবই সহায়ক।
কিভাবে গ্রহণ করবেন:
  • প্রতিদিন অন্তত এক থেকে দুই কাপ গ্রিন টি পান করুন।
  • সব সময় চেষ্টা করবেন চিনি ছাড়া পান করার তবে চাইলে আপনি ইস্টিভিয়া যোগ করতে পারেন।
3. দারুচিনি চা (Cinnamon Tea)
উপকারিতা:
  • দারুচিনি চা রক্তের শর্করার পরিমাণ বা মাত্রা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • আবার ইনসুলিন কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
  • দারুচিনি চায়ের মধ্যে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান অনেকাংশে বিদ্যমান।
তৈরি করার রেসিপি:
  • অন্ততপক্ষে এক কাপ পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন।
  • এক অথবা দুই চা চামচ গুঁড়োদারু চিনি অথবা একটি দারুচিনির কাঠি ফুটানো গরম পানিতে দিয়ে দিন।
  • অবশ্যই ৫-১০ মিনিট পর্যন্ত পানি ফুটিয়ে ছেঁকে নিবেন।
  • মনে রাখতে হবে দিনে অন্ততপক্ষে এক কাপ খাওয়া যেতে পারে।
সর্বোপরি আপনি যদি চান তবে সেই ক্ষেত্রে আমি আপনাকে একদম সহজ রেসিপি দিয়েও সাহায্য করতে পারি।

লেখকের শেষ কথা

[বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যাভাস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন ডায়াবেটিস রোগী সঠিক খাবার বেছে নেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ রাখতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের বাংলাদেশী খাবারের মধ্যেও অনেক স্বাস্থ্যকর এবং বিকল্প খাবার রয়েছে যা অনেকাংশে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সমৃদ্ধ। জনসচেতনতা পরিমিত পরিমাণ খাওয়া এবং জীবন যাপনের সামান্য পরিবর্তন এনে আমরা অনেকাংশে ডায়াবেটিস মোকাবেলা করতে সক্ষম। সর্বোপরি স্বাস্থ্যই হোক আমাদের অগ্রাধিকার।]

 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আশিক টেক আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন প্রতিটা কমেন্টে রিভিউ করা হয় নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url