সকালে খালি পেটে কি খাওয়া উচিত ১০টি টিপস ?

মৌসুমী ফল প্রক্রিয়াজাতকরণচলুন আজকে আমরা জানবো সকালে,খালি পেটে কি কি খাওয়া উচিত তা নিয়ে বিস্তারিত নিচে কিছু তথ্য দেওয়া হল যেগুলো পড়লে আপনার অনেক উপকারে আসবে। তবে আর দেরি না করে নিচের তথ্যগুলো দেখে নিন।

পেজ সূচিপত্র: সকালে খালি পেটে কি খাওয়া উচিত ১০টি টিপস ?

তুলসী পাতা বা গ্রীন টি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক করে 

তুলসী পাতা বা গ্রীন টি রোগ প্রতিরোধে করে যা আমাদের প্রয়োজন। তুলসী পাতা বা গ্রিন টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সহায়ক, প্রাচীনকাল থেকেই এটি প্রচলিত আছে। প্রকৃতির এই দুই উপাদানকে আমরা সহজেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে নিতে পারি, এখনকার যুগে আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে যে তুলসী পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং গ্রিন টির পলিফেনল যোগ যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

প্রথমেই আছি তুলসী পাতার কথাই। টি অত্যন্ত প্রাচীন যুগ থেকেই আয়ুর্বেদিক তুলসী নামে পরিচিত যা সকলেই চেনে, তুলসী পাতাতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, জিক্স আয়রন ফ্ল্যাভো নয়েডের মত উপকারী কিছু উপাদান। যদি নিয়মিত তুলসী পাতা বা তুলসীর চা পান করলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়।

অন্যদিকে গ্রিন টি হচ্ছে এখন সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের পছন্দের একটি পানীয়। গ্রিন টির একটি প্রধান শক্তি হল এতে থাকা রাতে পলিফেনল, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এগুলো শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল কমিয়ে কোষ ক্ষয় রোধ করে।

ভিজানো কিশমিশ ও কিশমিশের পানি লিভার ও রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে 

ভিজানো কিশমিশ ও কিশমিশের পানি লিভার ও রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে, এটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বহুদিন ধরেই পরিচিত। কিসমিস মূলত শুকনো আঙ্গুর আর শুকনো হওয়ার পর এতে প্রাকৃতিক ভিটামিন মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ঘনত্ব বেড়ে যায়। বিশেষ করে আমরা ভিজানো কিসমিস এবং তার পানে আমাদের হজম ও লিভারের জন্য আশ্চর্যজনক উপকার নিয়ে আসতে পারে।

লিভার হল মানব দেহের প্রাকৃতিক ফিল্টার। তোমরা যা খাইবা পান করি তার ক্ষতিকর অংশগুলো লিভার ফিল্টার করে, কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার নিয়মিত জীবনযাপন বা দূষণের কারণে লিভার অনেক সময় অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়তে পারে। জন্য প্রতিদিন ভিজানো কিসমিশে বা কিসমিশের পানি সাহায্য করতে পারে, কিসমিশে রয়েছে প্রাকৃতিক ফাইবার, আয়রন, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের লিভারের কার্যকারিতা আরো বাড়িয়ে তুলে।

নিয়মিত কিশমিশের পান করলে ত্বক উজ্জ্বল হয় কারণ রক্ত যখন পরিশুদ্ধ থাকে তখন ত্বকের প্রভাব স্পষ্ট বোঝা যায়। এছাড়াও ভিজানো কিশমিশের শরীরের প্রাকৃতিক শক্তি যোগায় সবশেষে বলা যায় ভেজানো কিশমিশ ও কিশমিশের পানি একটি সহজ, প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায় যা লিভার কে পরিষ্কার রাখতে এবং রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে।

খালি পেটে একটি আপেল ফাইবারে ভরপুর ও হজমে সহায়ক

আপেল এমন একটি ফল যা এভাবেই ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ। সকালে খালি পেটে একটি আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী, আপেলের ফাইবার বা আশ আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে যখন আমরা খালি পেটে একটি আপেল খাই তখন এর সলিউবল ফাইবার ভেতরে জেল তৈরি করে যা খাবার হজম কে সহজ এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

আপেল শুধুমাত্র হজম শক্তি নয় শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আপেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকারক টিস্যু করে দিতে সাহায্য করে খালি পেটে আপেল খেলে একটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, তাছাড়াও এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি যা শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়, কিন্তু ওজন বাড়ায় না মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আপেল অত্যন্ত উপযোগী।

আপেল আমাদের লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে খালি পেটে আপেলের প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের লিভারের এনজাইমকে সংকীয় করে। যা শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ দ্রুত বের করতে সাহায্য করে এই কারণে নিয়মিত সকালে খালি পেটে একটি আপেল খেলে শরীর হালকা ও সতেজ লাগে। খালি পেটে একটি আপেল খাওয়া হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সারাদিনের জন্য প্রাকৃতিক শক্তি যোগায়।

ভেজানা ছোলা বা মেথি ও চিয়া বীজ হজম শক্তি ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

ভেজানা ছোলা বা মেথি ও চিয়া বীজ, এই তিনটি খাবারই প্রাকৃতিকভাবে এমন কিছু গুণাগুনে ভরপুর যা হজম শক্তিকে বাড়াতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে দারুন ভূমিকা পালন করে । এগুলো প্রাচীনকাল থেকেই হজমের জন্য উপকারী এবং শরীরে সুস্থতার জন্য কার্যকরী খাবার হিসেবে পরিচিত, সকালে খালি পেটে বা ঘুম থেকে ওঠার পরে এই খাবারগুলো খেলে এর উপকারিতা আরো দ্রুত পাওয়া সম্ভব।

ছোলা প্রোটেন এবং ফাইবারের উৎস। ভেজানো ছোলা খেলে আমাদের হজম প্রক্রিয়া সংক্রীয় থাকে এবং দীর্ঘসময় পেট ভরা অনুভব হয়। ছোলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজমে সহায়তা করে, যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য ভেজানো ছোলা একটি দুর্দান্ত খাবার কারণ এটি অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা থেকে বিরত রাখে। চিয়া বীজ পানিতে ভিজিয়ে খেলে তা ফুলে জেলি জাতীয় হয়ে যায়।

তবে মেথি হজম শক্তি বাড়াতে খুবই কার্যকর। মেথি পানিতে ভিজিয়ে খেলে এর মধ্যে থাকা ফাইবার যা জেলি জাতীয় একটি স্তর তৈরি করে যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীরে ধীরে এবং দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে, মেথি এবং চিয়া বীজ একসঙ্গে বা আলাদাভাবে খাওয়া হজম শক্তির বাড়ায় আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এগুলো যুক্ত করলে খুব সহজেই আপনি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারবেন।

মধু ও গরম পানি শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে

মধু ও গরম পানি শরীরকে সুস্থ রাখে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মধু ও গরম পানি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য একটি অসাধারণ ও প্রাকৃতিক উপকার নিয়ে আসতে পারে প্রাচীনকাল থেকেই মধু একটি প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। গরম পানি আমাদের শরীরের ভেতর জমে থাকা বর্জ্য দূর করতে সাহায্য করে এবং তখন এই দুটি একসাথে খাওয়া হয়, তখন শরীর প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ থাকে।

সকালে খালি পেটে গরম পানির সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে হজম শক্তি সংক্রীয় হয়ে যায়। খালি পেটে গরম পানি খাওয়া আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হবে কারণ খালি পেটে গরম পানি খেলে গরম পানি লিভারকে সক্রিয় করে মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমাদের উচিত প্রতিদিন কিছু মধু ও গরম পানি খাওয়া যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে প্রতিদিন মধু গরম পানি একসঙ্গে মিশ্রণ করে পান করুন প্রতিদিন সকালে গরম পানি শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়, আর মধু প্রাকৃতিকভাবেই শক্তি যোগায় কিন্তু ফ্যাট জমতে দেয় না। খালি পেটে একটি খেলে দীর্ঘ সময় খুদা নিয়ন্ত্রণ থাকে।

ভেজানো বাদাম বা ছোলা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে

ভেজানো বাদাম বা ছোলা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে, যারা স্বাস্থ্যকর ভাবে ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য এই দুটি খাবার দারুন সাহায্য করতে পারে। ভেজানো বাদাম এবং ছোলা শুধু সুস্বাদই নয়, শরীরের জন্য পুষ্টিগুণে ভরপুর। ছোলা ও বাদাম এতে প্রাকৃতিকভাবেই এমন সব পুষ্টি রয়েছে যা শরীরকে শক্তি দেয় এবং বেশি গঠনে সহায়তা করে এবং ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

বাদাম প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফাইবার রয়েছে। বাদাম একটি প্রাকৃতিক ফ্যাট খাবার, যখন বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় তখন এটি আরো হজম-যজ্ঞ হয়ে যায় এবং শরীরের দ্রুত শোষিত হয়। ভেজানো বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা শরীরে ক্যালরি যোগ করে, তো বাদাম ক্ষতিকারক চর্বি জমতে দেয় না এছাড়াও বাদামে ভিটামিন ই ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মাংসপেশী শক্তিশালী  বেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

সলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যা শরীরকে দীর্ঘস্থায়ী শক্তি দেয়। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের জন্য ভেজানো ছোলা পেশী গঠনে দারুন সহায়ক। এছাড়াও এতে থাকা ফাইবার যা হজমে সাহায্য করে। আপনি যদি ওজন বাড়াতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে নাস্তায় ভেজানো বাদাম ও ছোলা খাওয়া একটি সহজ ও প্রাকৃতিক উপায়।

প্রতিদিন খালি পেটে একটি কলা খেলে শক্তি বৃদ্ধি হয়

প্রতিদিন খালি পেটে একটি কলা খেলে শক্তি বৃদ্ধি হয়, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি কলা খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। কলা প্রাকৃতিক শক্তির ভান্ডার হিসেবে পরিচিত প্রাচীনকাল থেকেই, খালি পেটে কলা খেলে শরীরে খুব দ্রুত শক্তি যোগায়। তাই সকালে খালি পেটে একটি কলা খেলে দিন শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ও এনার্জি পাওয়া যায়।

কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। যা আমাদের পেশী এবং স্নায়ু কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে, সকালের দিকে যখন শরীর দীর্ঘ সময় উপস্থাকে তখন খালি পেটে কলা খাওয়া শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে কলাতে থাকা ভিটামিন বি ৬ মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে এবং রক্তকে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে।

কলা শুধু শক্তি বৃদ্ধি নয় খালি পেটে কলা খাওয়া হজমের জন্য ভালো পেতে থাকা ফাইভার বা আশ কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং অন্তর পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। সবশেষে বলাই যায় প্রতিদিন খালি পেটে একটি কলা খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় মনোযোগ বাড়ে এবং হজমের উন্নতি হয় এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবন সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সকলের খাদ্য

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সকলের খাদ্য, প্রতিদিন খাবারের সঠিক পুষ্টি খুবই জরুরী। আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম তখনই ভালো কাজ করে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন খনিজ এবং প্রোটিন পায়। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাওয়ার রাখতে হবে যা প্রাকৃতিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার উচিত যেমন লেবু কমলা মাল্টা আমলকি পেয়ারা এবং কাঁচা মরিচের মতো সকল খাবার যা আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে এগুলো শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, আমাদের শরীরের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

লেখক এর শেষ মন্তব্য

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বা স্বাস্থ্য রক্ষা করার সবচেয়ে বড় উপায় হল সচেতন জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কোন একদিনের চেষ্টা নয় বরং এটা নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন ও পর্যাপ্ত ঘুম ব্যায়াম ও মানসিক শান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আশিক টেক আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন প্রতিটা কমেন্টে রিভিউ করা হয় নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url